।মাস্টারদা সূর্যসেন,ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অবিষ্মরণীয় নাম।যিনি সশস্ত্র আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক ।

 

   মাস্টারদা সূর্যসেন,ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অবিষ্মরণীয় নাম।যিনি সশস্ত্র আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক । 

                 

                        মাস্টারদা সূর্যসেন

মাস্টারদাসূ্র্যসেন (১৮৯৪-১৯৩৪)

 সূচনা

1934 সালে 11 জানুয়ারি গভীর রাত।  চট্টগ্রামের জেলখানা সেখানে হাজির বড় বড় ইংরেজ দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ইংরেজি তারিখ অনুসারে রাত্রি বারোটার পরে শুরু হয় নতুন তারিখ সেই হিসেবে 12 জানুয়ারি ঘন্টা বাজতেই ঘুমন্ত দুজন মানুষকে রাত দুপুরে ইংরেজ জেলপুলিশ তুলে দেয় ফাঁসির মঞ্চে ফাঁসির মঞ্চ থেকে উচ্চকণ্ঠে বন্দেমাতরম ধ্বনি জেলখানার   সু উচ্চ প্রাচীর ভেদ করে নৈশ অন্ধকারের বুক চিরে ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামের কারাগার পেরিয়ে চারিদিকে বন্দেমাতরম প্রতিধ্বনিত হয়ে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যায় গভীর অন্ধকারে সাধারণ মানুষ জানতেও পারল না সেই কালো রাতে শেষ করে দেওয়া হলো ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুজন অসীম সাহসী বিপ্লবীকে। 

  কারা ওই দু'জন মানুষ ? ওই দু'জন মানুষ হলেন তারকেশ্বর দস্তিদার ও মাস্টারদা সূর্যসেন আজ মাস্টারদা সূর্যসেন     এর জীবন কথা ,পরে কোন একদিন হবে তারকেশ্বর দস্তিদারের কথা

 সাহস কাকে বলে, নেতা কেমন হওয়া উচিত, দেশপ্রেম কি ? সেসব তো বর্তমান প্রজন্ম জানবেই না, কারণ, বর্তমান নেতাদের আচার আচরণ দেখে মানুষের লজ্জা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্তি ঘটে না শুধু একটা কথাই মনে হয়, মাস্টারদা বা ওই ধরনের নেতা যদি সেদিন জন্ম না নিতেন তাহলে হয়তো আমরা আজও পরাধীন থেকে যেতাম ! সেই জন্যই নতুন প্রজন্মকে এইসব মহাজীবনের ঘটনা জানা উচিত এবং জানানো উচিত। 


জন্ম ওশিক্ষা

 সালটা  1894 , 22 মার্চ চট্টগ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে একটা রুগ্ন শীর্ণকায় শিশু জন্মগ্রহণ করেনপিতা রাজমনি সেন ও মাতা শীলাদেবী দুজনে মিলে সন্তানের নাম রাখেন সূর্য, যার ডাকনাম ছিল কালু। উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদে পড়াশোনা শেষ করেই তিনি ফিরে এলেন চট্টগ্রাম ছাত্রাবস্থায় ইংরেজদের অত্যাচারের তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন তখন থেকেই তিনি মনেপ্রাণে স্থির সিদ্ধান্ত নেন একদিন তিনি একটি বিপ্লবী দল গড়বেন এবং ইংরেজ অত্যাচারের সমুচিত জবাব দেবেন মনের আগুন বুকে পুষে রেখে তিনি যোগ দিলেন একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজে। তিনি এটা খুব ভালভাবেই জানতেন যে, ছাত্ররা এদেশের ভবিষ্যত সেজন্য তিনি পড়ানোর পাশাপাশি ছাত্রদের, রাজনীতির পাঠ দিতে শুরু করলেন বেছে নিতে থাকলেন সাহসী তরুণদের এবং উদ্দীপ্ত করতে শুরু করলেন দেশমাতৃকার চরণে আত্ম বলিদানের মন্ত্রে। 

https://draft.blogger.com/blog/post/edit/8989720309545490274/5812433400867526304?hl=en

বিপ্লবের পদধ্বনি

  অল্প দিনের মধ্যে প্রিয় মাস্টার সূর্যসেন হয়ে উঠলেন,সকলের প্রিয় মাস্টারদা ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্বাধীনতাযুদ্ধে কিন্তু ব্যর্থ হলেন । বুঝলেন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে নিজেকেই বিপ্লবী দল গড়তে হবে 1930 সালে তাঁর সেই স্বপ্ন সফল হলো গড়লেন নিজের দল নাম দিলেন Indian Republic Army. মাস্টারদা বুঝেছিলেন অহিংসার পথে ইংরেজদের দেশ ছাড়া করা কিছুতেই সম্ভব না, সেইজন্য শুরু হল অস্ত্রশিক্ষা কিন্তু অস্ত্রের অভাবে অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ল সেই প্রচেষ্টা তার অনুগামীরা চাঁদা তুলে ফেলল 40 হাজার টাকা কিন্তু আরো অস্ত্রের প্রয়োজন,  রাস্তা বেরিয়ে গেল লুন্ঠন করতে হবে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার। পরিকল্পনা হলো দ্রুত আক্রমণ পরিচালনার জন্য সেনাপতি নির্বাচিত করা হল অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ,লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী ও ওপেন ভট্টাচার্য ঠিক হলো অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে তারা চট্টগ্রামের জাতীয় সরকার ঘোষণা করবেন

  শুরু হলো গোপন প্রস্তুতি বিপ্লবে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এরকম ব্যক্তিদের সুকৌশলে দূরে সরিয়ে দেওয়া হলো1930 সালের 18 এপ্রিল Indian Republic Army ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল ওইদিনই রাত দশটায় চারটি দল চারটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য ছড়িয়ে পড়লো একদল গেল পুলিশের অস্ত্রাগার লুন্ঠন করতে, একদল গেল সামরিক কেন্দ্রের অস্ত্রাগার লুন্ঠন করতে একদ গেল টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে আর একদল গেল ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে সর্বোচ্চ ইংরেজ অফিসারদের বন্দী করতে কিন্তু সেদিন যীশুর মৃত্যু দিন থাকায় ক্লাব ছিল খালি কিন্তু অস্ত্রাগার লুন্ঠনের কাজটি সুনিপুন ভাবেই হলো


              

Surya Sen Indian  Freedom Fighter


সংগ্রাম ও বিশ্বাসঘাতকতা

 অত্যাচারী ইংরেজ হঠাৎ আক্রমণে প্রথমে বিপর্যস্ত হলেও 20 এপ্রিল সরকারি বাহিনী প্রবেশ করল চট্টগ্রামে খবর পেয়ে বিপ্লবীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আশ্রয় নিল জালালাবাদ পাহাড়ে    22 এপ্রিল বিশাল ইংরেজ বাহিনী ঘিরে ফেললো পাহাড়। প্রচন্ড যুদ্ধ হলো, মারা গেল 11জন বিপ্লবী ও 60জন ইংরেজ সৈন্যইংরেজ পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেলএরপর ইংরেজরা হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল দলটিকে এবং দলের নেতা মাষ্টারদাকে একদিন ইংরেজ সশস্ত্রবাহিনী হঠাৎ ঘিরে ফেলে বিপ্লবী দলটিকে তবে কি ওরা ধরা পড়ে যাবে ? দুজন সঙ্গীকে নিয়ে সূর্যসেন রুখে দাঁড়ান পুলিশের বিরুদ্ধে আর সবাইকে আদেশ করেন পালিয়ে যেতে লড়াই করতে করতে একসময় গুলি শেষ হয়ে আসে আহত হয় সঙ্গী দুজন পুলিশ এগিয়ে যায় বিপ্লবীদের লক্ষ্য করে ধরার জন্য কিন্তু কোথায় মাস্টারদা! সুকৌশলে পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে আত্মগোপন করেছেন পাহাড়ে ব্যর্থ পুলিশ ,ব্যর্থ ইংরেজ সরকার। কিন্তু ইংরেজ এত সহজে ছাড়বার পাত্র নয়চেষ্টা চলতে থাকে

 সুযোগও এসে পড়ে একদিন ।1933 সালের 16 ই ফেব্রুয়ারি গৈড়লা গ্রামে, ক্ষিরোদপ্রভ বিশ্বাসের বাড়ি থেকে, নেত্র সেন নামে এক ব্যক্তি মাস্টারদা সূর্য সেন ও ব্রজেন সেনকে  ধরিয়ে দেয় পুরস্কারের লোভে তিন মাস পরে সূর্যসেনের অপর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী তারকেশ্বর দস্তিদার ও কল্পনা দত্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে একটি বিশেষ আদালতে, প্রহসনের বিচারে মাস্টারদা তারকেশ্বরের ফাঁসি হয় 1934 সালের 12 ই জানুয়ারি কল্পনার হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 11 জানুয়ারি রাতে মাস্টারদা তার জীবনের শেষ বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের রাজবন্দীদের সামনে

আশার আলো 

যদিও মাস্টারদার এই প্রচেষ্টা সার্থক হয়নি তথাপি তার বলিদান ভারতবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার জীবনের শেষ কথা ছিল,” মনোবল হারিও না ,ঐক্যবদ্ধভাবে সঠিক পথে এগিয়ে চলো। জয় হবেই মাস্টারদার জীবনের শেষ কথা আজও যেন সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সূর্য সেনদের ফাঁসি দিয়ে সংগ্রামকে কখনো শেষ করা যায় না মাস্টারদারা চিরদিনই ফিরে ফিরে আসে, ভরসা যোগায় উদ্বুদ্ধ করে সেই জন্যই তারা  মরণজয়ী।

 

Freedom For all
https://draft.blogger.com/blog/post/edit/8989720309545490274/8472638881056809023?hl=en

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

।সরলা দেবী চৌধুরানী ।। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, রাজনীতি, সমাজসেবা ও নারী শিক্ষা প্রসারে একজন নির্ভীক বীরঙ্গনা ও পথিকৃৎ ।

। আচার্য হরিনাথ দে'র মতো বহুভাষাবিদ পন্ডিত, শুধু ভারতবর্ষে নয় ,সারা বিশ্বেই এমন অসাধারণ প্রতিভা বিরল।